বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ইংরেজ বাজারে নবজোয়ার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন সভা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ফারাক্কায় গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের সময় যত ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে ততই সরব হচ্ছেন মমতা। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগও তুলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফারাক্কার পানি চুক্তিতে বাংলাদেশকে পানি দেওয়ার পরিবর্তে ৭০০ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, যা আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, গঙ্গার ভাঙন ১০০ বছর ধরে চলছে, সবাই এসেছে চলে গিয়েছে। কিছুই করেনি। অথচ গঙ্গার ভাঙন সাবজেক্টটা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, আমাদের (রাজ্য সরকারের) অধীনে নেই। ফারাক্কা সেটাও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, তুমি (কেন্দ্রীয় সরকার) আমাদের জল বাংলাদেশকে দিলে আমার আপত্তি নেই, আমি হাসিনাজিকে ভালবাসি। কিন্তু আমাকে যে তার পরিবর্তে ৭০০ কোটি টাকা দেবে বলেছিলে, আমার সরকারকে, আমার বাংলা গভর্নমেন্টকে, তার এক পয়সাও তো দিলে না। বলতে বলতে গলা ব্যথা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, হয়তো কেউ ভাবতে পারেন আপনি প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদীর) সঙ্গে গিয়ে দেখা করছেন না কেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বহুবার তার কাছে গিয়েছি। কিছুই দেয় না, শুধুই নেয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা দাও। গঙ্গার ভাঙন রোধ করে দাও। বন্যায় ত্রাণ সহায়তার প্ল্যান দাও। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের টাকা দাও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক জাতীয় নিবন্ধন (এনআরসি) লাগু করার, বিরোধিতা করে বলেন, আধার কার্ড (ভারতের পরিচয়পত্র) না করলে তুমি বিদেশি। কদিন আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি এসেছে। মাঝে থেমে গিয়েছিল, আবার বেড়েছে। একটু যদি এদিক-ওদিক হয় আধার কার্ডে বা প্যান কার্ডে তাহলে তুমি বিদেশি। তোমাকে বিদায় করে দেওয়া হবে।
এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় মমতা বলেন, আমি বলি ক্ষমতা থাকলে হাত তুলে দেখাও। আমি আগেও করতে দিইনি আজও কথা দিয়ে গেলাম আমি তা করতে দেবো না। আমার তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার কখনোই তা করতে দেবে না। আমরা সবাই মানুষ, এটা আমাদের পরিচয়। নির্বাচন এলেই ভোট নেওয়ার জন্য দাঙ্গা বাঁধানো হয়। আমি কারও মৃত্যু চাই না। আমি মৃত্যুর রাজনীতি চাই না। আমি মানবিক রাজনীতি করি।
গত বছরের নভেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ফারাক্কা ব্যারাজ প্রকল্পের আরও প্রসার বা ব্যাপ্তি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা।,
আগামী চার বছরের মধ্যে (২০২৬ সালে) ৩০ বছর মেয়াদি ফারাক্কায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এ অবস্থায় পানি চুক্তির পরিবর্তে মমতার বকেয়া অর্থের (৭০০ কোটি টাকা) দাবি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে। ভাগীরথী নদীতেও অতিরিক্ত পানি দাবি সোচ্চার মমতার হওয়া শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।,