
২৪ বছর বয়সী সোনম ও ২৯ বছর বয়সী রাজা ১১ই মে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে হানিমুনের জন্য সোনম মেঘালয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। তারা ২১শে মে শিলং পৌঁছান। এরপর তারা পূর্ব খাসি হিল জেলার চেরাপুঞ্জি বা সোহরা অঞ্চলে যান। কিন্তু রাজার পরিবার জানত না যে, সোনম প্রেমে পড়েছেন তাদের পারিবারিক ব্যবসায় কাজ করা ২১ বছর বয়সী কর্মচারী রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে।
অভিযোগ আছে, কুশওয়াহা তার তিন বন্ধুকে রাজাকে হত্যা করার জন্য নিয়োগ দেন এবং সোনম তাদের ২০ লাখ রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ২৩শে মে সোনম ও রাজা জলপ্রপাত দেখতে একটি পাহাড়ের চূড়ায় ট্রেকিংয়ে যান। সেই সময়ই হত্যাকারীরা তাদের পিছু নেয় এবং নির্জন স্থানে পৌঁছালে সোনমই রাজাকে হত্যার নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোনম এরপর নিজেই তার স্বামীর দেহ গিরিখাদে ফেলে দিতে সাহায্য করেন।
পূর্ব খাসি হিল জেলার পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েম জানান, হত্যার পর সোনম প্রথমে মাওকাদক থেকে ট্যাক্সিতে শিলং যান। সেখান থেকে গৌহাটি পৌঁছান একটি পর্যটক ট্যাক্সিতে। এরপর গৌহাটি থেকে একটি ট্রেনে চেপে পালিয়ে যান। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি ইন্দোরে গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্যান্য অভিযুক্তদের জবানবন্দি পাওয়ার পরই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। অপরদিকে তিন হত্যাকারী সোহরা থেকে ট্যাক্সিতে গৌহাটি যায় এবং সেখান থেকে ট্রেনে করে ইন্দোরে ফিরে যায়। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তাদের আলাদা ও সমন্বিত পালানোর পদ্ধতি দেখে বোঝা যায়, হত্যার পর পালানোর পরিকল্পনাও আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহ উদ্ধারের সাত দিনের মধ্যেই তারা সোনমের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তাকে গ্রেফতার করে। যদিও সোনমের মোবাইল এখনও উদ্ধার হয়নি, তবে পুলিশ নিশ্চিত যে হত্যার দিন সে কুশওয়াহার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং কুশওয়াহা আবার তার ঘাতক বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি সোনম আগে কখনও মেঘালয়ে এসেছিলেন কিনা অথবা হত্যার নির্দিষ্ট স্থানটি তিনি আগে থেকেই ঠিক করেছিলেন কিনা।
এসপি বিবেক সিয়েম বলেন, তিনি হয়তো গুগল সার্স করে নির্জন জায়গা খুঁজে বের করেছিলেন। এখানে প্রচুর বন আছে। হয়তো সুযোগ বুঝে এটাই করেছে। এটা অন্য যেকোনো জায়গায়ও হতে পারত। আমরা নিশ্চিত নই। কারণ তিনি বলছেন আগে কখনও শিলং আসেননি।
সোনম মঙ্গলবার রাতে শিলং পৌঁছানোর কথা। কুশওয়াহা ও বাকি তিন ঘাতক বুধবার সকালে পৌঁছানোর কথা। পুলিশ সুপার বলেন, আমরা তাদের আদালতে হাজির করবো এবং এরপর পুলিশ রিমান্ডে নেব। তখনই ঠিক করবো কবে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ডের পুনর্গঠন করা হবে। তিনি আরও বলেন, তারা একসঙ্গে উপরে উঠেছিল। তারা একটি দর্শনীয় স্থানে মিলিত হয় এবং সেখান থেকে হেঁটে যায়। তাদের স্কুটারগুলো নিচে ছিল। ঘাতকদের মতে, সোনমই তাদের ‘ওয়েই সাওডং’ ঝরনায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এই ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সদ্য বিবাহিত এক নারী কীভাবে এমন নির্মম পরিকল্পনায় জড়িয়ে পড়লেন, তা নিয়ে সমাজে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে। তদন্তের পরবর্তী ধাপে পুলিশ জানতে পারবে হত্যার পুরো পরিকল্পনা কার মাথা থেকে এসেছিল এবং আসল উদ্দেশ্য কী ছিল।